জনমত নিউজ ডেস্ক : সবুজ-শ্যামল বাংলার পথে-ঘাটে আজ সকালের নব রবি যে কোমল পরশ বুলিয়ে গেছে তা বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের মতো নয়। পৌষের প্রভাতেও ছিল না কুয়াশার আধিক্য। এ যেন বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও অমিত সম্ভাবনার হাতছানি। আজকের সূর্য ছিল অনেক তেজস্বী। সেই সূর্য দিয়ে গেছে নয়া জীবনের ডাক। গতরাত থেকেই বাংলার শহর-বন্দর, অলি-গলি, গ্রাম-গঞ্জ ও মেঠোপথের পল্লীতে বেজে চলেছে বিজয়ের গান। বাঙালির হৃদয় গহীনে অনুরণিত হচ্ছে সেই সুর। মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/খুশির হাওয়া ওই উড়ছে/বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই ঝরছে।’ কেননা, আজ বাঙালির গৌরবের, আনন্দের, অহঙ্কারের, আত্মমর্যাদার ও আত্মোপলব্ধির দিন।
আজ মহান বিজয় দিবস। দেদীপ্যমান, প্রসন্ন ও আলোকিত বিজয় দিবস। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসরদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার দিন। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ৪৬ বছর আগে এই দিনে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল এক নতুন দেশ- বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির জীবনে তাই আজ এক মহা আনন্দের দিন। এমনই একটি দিনের প্রতীক্ষায় বাঙালির কেটেছে হাজারও বছর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাঙালির বিজয় ছিনিয়ে আনার দিন। সেই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র সমর্পণ করে। এরপর মাথা নিচু করে দাঁড়ায় অকুতোভয় বীর বাঙালির সামনে। স্বাক্ষর করে পরাজয়-সনদে। এ কারণেই আজকের দিনটি এতটা গৌরবের ও আনন্দের। তবে এ বিজয় অর্জনে যেহেতু এক সাগর রক্ত আর হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম দিতে হয়েছে, তাই আনন্দের পাশাপাশি বাঙালির মনে আছে অনেক ব্যথা, কষ্ট। এ কারণে ৪৭তম বিজয় দিবসে মুক্তির জয়গানে মুখর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে আজ স্মরণ করবে জাতির সেইসব শ্রেষ্ঠ সন্তান ও অকুতোভয় বীর এবং মা-বোনদের। এ সময় অনেকেরই মুখে থাকবে চেতনা শানিত করার গান, ‘সবকটা জানালা খুলে দাওনা/আমি গাইব গাইব, বিজয়েরই গান/ওরা আসবে, চুপি চুপি/যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।’
আজকের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। এতে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশে স্মৃতির মিনারগুলো আজ শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। চিরকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে গাইবে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে/আমার হৃদয় রেখে যেতে চায় তাদের স্মৃতির চরণে…।’ পাশাপাশি বিজয়োল্লাসরত মানুষ শপথ নেবে স্বপ্নীল দেশগড়ার। ৪৬ বছরের মতই সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে দেশকে সাফল্য আর সমৃদ্ধির শিখরে লাল-সবুজের গর্বিত পতাকা উড়ানোর শপথ নেবে।